জেলে বন্দী না থাকলেও করোনার কারণে ঘরে বন্দী শিশুরা। করোনা সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে। গ্রাস করে ফেলেছে পুরো পৃথিবীকে। যুবক, বৃদ্ধদের সঙ্গে শিশুরাও এর ছোবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। চিকিৎসকদের মতে, হাত ধোয়া, বাইরে গেলে মাস্ক পরার পাশাপাশি অন্যদের সংস্পর্শে না আসা—এর জন্য ঘরে থাকা জরুরি। ঘরে থাকলে বাইরের লোকের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা পেতে পারি।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক ধাপে। শিশুরা তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে বাড়িতেই। কেউবা সহযোগিতা নিচ্ছে টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেট থেকে।
শিশুকে ঘুম থেকে উঠিয়েই হাতে দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবই, যা চলছে রাত পর্যন্ত, মাঝে খাবার ও গোসলের বিরতি ছাড়া। এমন পরিবেশে এক একটা শিশুর ওপর বয়ে চলছে ঝড়। গ্রামের শিশুরা বাড়ির আঙিনায় বের হতে পারলেও শহুরে শিশুদের দিন কাটছে পাঠ্যবই হাতে চার দেয়ালের ভেতরে। সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশে একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার ব্যক্তিত্বে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। অভিভাবকেরা এই বিষয়ে জ্ঞাত থাকলেও বিষয়টা মাথায় নেন না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা শিশুর পাঠ্যবইয়ে পড়াশোনায় তখনই মনোযোগ আসবে, যখন তার মস্তিষ্কে কোনো ধরনের চাপ থাকবে না৷ একরকম আনন্দময় পরিবেশ যখন তৈরি হবে। এই আনন্দময় পরিবেশ তৈরি কিংবা চাপ কমানোর উত্তম মাধ্যম ঘরের বাইরের পরিবেশ কিংবা খেলাধুলা। যা এখন এই করোনা পরিস্থিতিতে সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই শিশুরা আছে করোনা ও অভিভাবক এই দুই দিকের চাপে। শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়তে দেখা যাচ্ছে, যা একটা শিশুর মানসিক বিকাশে অনেকটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিবেশে শিশুকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে শিশুর বিনোদন নিশ্চিত করতে হবে। বিনোদনের জন্য ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিশুর হাতে তুলে দিন মানসিক বিকাশে সহায়ক কিছু বই, যা তাকে বর্ধিত জ্ঞানের পাশাপাশি দেবে অনেকখানি আনন্দ।
দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যদি ছবি আঁকার সুযোগ পায়, তাহলে তারা মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অভিনব চিন্তার মাধ্যমে শিশু যখন বিভিন্নভাবে শিল্পচর্চার সুযোগ পায়, তখন তার সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়। সে অসাধারণভাবে ভাবতে ও চিন্তা করতে শেখে, যা তাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শেখায় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সে তখন সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তাই হাতে তুলে দিতে পারেন রংপেনসিল আর আর্ট বোর্ড।
শৈশব থেকেই শারীরিক ও মানসিক অনেক কাজের ওপরেও রয়েছে সংগীতের নিবিড় প্রভাব। সংগীত মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। ভালো সংগীত শুনলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুকে আগ্রহী করে তোলে। তাই আপনি শিশুকে গান শোনাতে ও গাওয়াতে সাহায্য করতে পারেন। এ ছাড়া এই করোনা পরিস্থিতিতে শিশুকে টেলিভিশনের মাধ্যমে মানসিক বিকাশে সাহায্য করতে পারেন। আসুন, শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে বাঁচাই পুরো বিশ্বকে।
লেখক: তানভীরুল ইসলাম
সম্পাদক ও প্রকাশক
কিশোরদের ছোট কাগজ
"ছুটিরপাতার"
mdtanvirul54@gmail.com
0 coment rios:
ধন্যবাদ।।