ছুটিরপাতা: জীবনযাপন

শিরোনাম
লোডিং...
Menu
Showing posts with label জীবনযাপন. Show all posts
Showing posts with label জীবনযাপন. Show all posts

Thursday, May 28, 2020

দেড়হাজার যাত্রাপালা ও নাটকের পরিচালক উলিপুরের নজির হোসেন

দেড়হাজার যাত্রাপালা ও নাটকের পরিচালক উলিপুরের নজির হোসেন





তানভীরুল ইসলাম-
‘যাত্রা’ ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় লোকনাট্য ধারা। সাধারণত চারঘন্টা ব্যাপ্তির এ আয়োজনে থাকে বিপুল বিনোদন। কর্নেট, বাঁশি আর ঢোলের শব্দ ও উজ্জ্বল আলোর ব্যবহারে নাটকীয় উপস্থাপনা যাত্রার বৈশিষ্ট্য। যাত্রার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির আনন্দ-বেদনা, শেকড় ও ঐতিহ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কালের বিবর্তনে আজ যাত্রাপালা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে যাত্রাকে জীবনের ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা মনে করে এখনও আকড়ে আছেন অনেক শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, লেখক ও পরিচালক। তাদেরই একজন মোঃ নজির হোসেন কবিরাজ।
নজির হোসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মঞ্চস্থ প্রায় ১৫০০ যাত্রাপালা ও নাটকের পরিচালক। এই শিল্পে তাঁর রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিষ্য। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মাদারটারী গ্রামে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত আইজুদ্দিন ব্যাপারী ও মাতা মৃত রহিমা বেগম। পেশায় তিনি একজন পশুচিকিৎসক। এলাকায় তাকে সকলেই ওস্তাদ বলে ডাকেন।
নজির হোসেনের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিকের গণ্ডিতে থেমে গেলেও থামেনি জীবনপাঠ। তিনি বিশ্বকে পাঠশালা আর জীবনকে বই জ্ঞান করে এখনও অধ্যয়ন করে চলেছেন। যাত্রাশিল্পে নিবেদিত নজির হোসেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও পরিচালক।
শিল্পের এই অঙ্গনে তিনি প্রায় পাঁচশ শিষ্যের ওস্তাদ হলেও তাঁর কোনো ওস্তাদ ছিল না! অবাক বিষয় হলেও এটাই সত্যি। তাঁর কোনো ওস্তাদ বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ছিল অনুপ্রেরণা। আব্দুল আলীম, আব্দুল লতিফ, আতা খান, সুবীর নন্দীর মতো শিল্পীদের গানে অনুপ্রেরণা পেয়ে তিনি নিজেও কিছু বন্ধুসহ শুরু করেন পথচলা। যাত্রা পরিচালনার পাশাপাশি যাত্রাপালায় নিজে অভিনয় এবং গানও গেয়েছেন।
নজির হোসেন প্রেমের ফাঁসি, হিংসার পরিণাম, কলঙ্কের ফুল, গরীবের ছেলে, রিক্সাওয়ালার ছেলে, প্রেমের সমাধীর তীরে, গরীব কেন কাঁদে, আবির ছড়ানো বাংলার মসনদসহ অনেক জনপ্রিয় নাটক ও যাত্রাপালা পরিচালনা করেন। ৩০টির মতো যাত্রাপালা রচনার পাশাপাশি গান রচনা করেছেন প্রায় ২ শতাধিক। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, জুড়ি, ঢোল, খোল ও বেহালায় পারঙ্গম তিনি। তাঁর হাতে এলেই যেনো বাদ্যযন্ত্রগুলো নিজে নিজে বেজে ওঠে।
শত-সহস্র দর্শকের সামনে যাত্রামঞ্চের সেই উজ্জ্বল আলো ঝলমলে রাত এখন অনেকটাই ফিকে। নিয়মিত মঞ্চস্থ না হওয়ার কারণে ভেঙ্গে যাওয়ার পথে নজির হোসেনের দল। তবু তিনি লড়ে যাচ্ছেন, হাল ছাড়ছেন না। যতদিন পৃথিবীতে আছেন যাত্রার উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে দিতে চান বাংলার প্রান্তর।

  • তানভীরুল ইসলাম : সম্পাদক ও প্রকাশক, ছুটিরপাতা।